স্বামীর ৫টি কাজ স্ত্রীকে কষ্ট দেয়

স্বামীর ৫টি কাজ স্ত্রীকে কষ্ট দেয়

আসসালামু আলাইকুম, বন্ধুরা আশা করি আল্লাহর রহমতে সকলে ভালো আছেন ।

আজকের আলোচনার বিষয় স্বামীর ৫টি কাজ যা স্ত্রীকে কষ্ট দেয় বা স্ত্রীর মন ভেঙে দেয় । বিয়ের পরে স্বামীর কিছু কাজ স্ত্রীর মন ভেঙে দেয়, অনেক স্ত্রী সহ্য না করতে পেরে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়ি চলে যায় । আর কেউ বুকের ভিতর কষ্ট যন্ত্রনা চেপে রেখে রয়ে যায় ।

যদি কোন স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে ৫টি কাজ করে থাকেন তাহলে মনে রাখবেন আপনি ইসলাম পরিপন্থী কাজ করছেন । আপনাকে অনুরোধ করছি এই নোংরা কাজ বন্ধ করুন । আপনার দুনিয়া ও আখেরাত উজ্জ্বল হবে । ইনশাআল্লাহ

১. বিয়ের পর অবহেলা করা

একজন মেয়ে নিজের পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজনের মায়ার বন্ধন ছেড়ে, স্ত্রী হয়ে স্বামীর ঘরে আসে । এর পর থেকে তার চাওয়া পাওয়া সব স্বামীর কাছে । কিন্তু বর্তমানে অনেক স্বামী বিয়ের কিছুদিন পর স্ত্রীদের অবহেলা করতে শুরু করে । অবহেলা বলতে যেমন-গুরুত্ব না দেওয়া, খোঁজখবর না রাখা, স্ত্রীর কথা শুনে না শোনার ভান করে থাকা, গালি দেওয়া, কর্কশ ভাষায় কথা বলা, মানসিক টর্চার করা, কাজের জন্য বিদেশে গেলে স্ত্রীর কোন খোঁজ না নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে না দেওয়া এবং হাত খরচ টাকা না দেওয়া, ইত্যাদি ।

যদি কোন স্বামী এমন করে থাকে তাহলে সে গুনাহগার হবে এবং কিয়ামতের দিন জবাবদিহি করতে হবে । অনেক ভেবেচিন্তে যখন বিয়ে করেছেন তখন সারা জীবন স্ত্রীকে ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে রাখুন । সংসার সুখ শান্তিতে ভরে যাবে, রিজিকে বরকত হবে । ইনশাআল্লাহ

২. প্রতি কাজে ভুল ধরা ও ঘৃণা করা

প্রত্যেক মানুষেরই কিছু না কিছু ভুল আছে , মানুষ ছোট হোক অথবা বড় ভুল করে থাকে । অনেক স্বামী এমন আছে যারা স্ত্রীদের ছোটখাট ভুল গুলোকে খুব বড় ভাবে দেখে । অথচ সে নিজে অনেক ভুল করে থাকে, সেগুলো একবারও চিন্তা করে না। একজন মেয়ে সারাদিন বাড়ির কাজকর্ম করে থাকে । এর মাঝে অনেক ছোটখাটো ভুল হতে পারে।

এর জন্য সব সময় ভুল ধরে বকাবকি করলে একজন স্ত্রী কখনো সুখী হতে পারবেনা প্রত্যেক কথায় খুটখাট করা কোন স্ত্রী পছন্দ করে না । প্রত্যেকেরই স্বপ্ন আছে, চাওয়া-পাওয়া আছে । নারী বলে যে শুধু কষ্ট সহ্য করবে এমন চিন্তা ধারা শয়তানের পক্ষ থেকে আসে ।

দুজনের মধ্যে আল্লাহতালা তাআলা গভীর ভালবাসার সৃষ্টি করে দেন । আর শয়তান সেই ভালোবাসা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে । স্বামী ও স্ত্রী উপায় কে একথা বুঝতে হবে এবং শয়তানের জাল থেকে (অর্থাৎ ছোটখাটো বিষয় কে বিতর্কিত না করে) একে অপরকে মানিয়ে নিতে হবে ।

এছাড়া স্বামী যদি স্ত্রীকে ঘৃণা করে, তাহলে একজন স্ত্রী সেটাও পছন্দ করেনা । ঘৃণা বলতে যেমন- একই গ্লাসে পানি না পান করা, স্ত্রী কিছু খাইয়ে দিতে চাইলে স্ত্রীর হাতে না খাওয়া , ইত্যাদি । এ বিষয়ে একটি হাদিস প্রত্যেক স্বামীদের জানা দরকার । হাদিসটি হলো-

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “কোন মুমিন স্বামী যেন মুমিন স্ত্রীকে ঘৃণা না করে। যদি তার কোন একটি আচরণ অপছন্দনীয় হয় অন্য আরেকটি আচরণ সন্তোষজনক হবে।” সহিহ মুসলিমে (১৪৬৯)

অর্থাৎ স্ত্রী যে সমস্ত কাজ করে থাকে তার মধ্যে কয়েকটি যদি পছন্দ না হয় । তাহলে বাকি যে কাজগুলি পছন্দনীয় হবে সেই গুলোর দিকে লক্ষ্য রেখে অপছন্দনীয় কাজ গুলি এড়িয়ে যেতে হবে ।

৩.পরকীয়া প্রেম করা

পরকীয়া প্রেম সম্পূর্ণরূপে হারাম নিজের স্ত্রী থাকার পরেও যদি কেউ পরকীয়া প্রেম করে এবং তার সঙ্গে শারীরিক মেলামেশা করে তাহলে তার শাস্তি খুব কঠিন ।

বিবাহের পর কেউ অবৈধভাবে শারীরিক মেলামেশা করলে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে তাকে রজম করা হতো অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো – এ ব্যাপারে বহু হাদিস আছে ।

বর্তমানে যেখানে কোরআনের শাসন চালু আছে সেখানে বিবাহের পর জেনা বা ব্যভিচার করলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় ।

কোন স্বামী যদি বিয়ের পর স্ত্রী রেখে পরকীয়া প্রেম করে, তাহলে তা স্ত্রী সহ্য করতে পারেনা, এতে স্ত্রীর মন ভেঙ্গে যায় । শুধু স্ত্রীর মন নয় একটা সুখের সংসার ভেঙ্গে ছারখার হয়ে যায় । স্ত্রীকে মন থেকে ভালোবাসুন, তাকে সাজগোজের মধ্যে যত্নে রাখুন, দেখবেন পরকীয়ার কথা কখনো মাথায় আসবে না । যদি কখনো শয়তান ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে একবার চিন্তা করুন আল্লাহ তাআলা যাকে আপনার জন্য বৈধ করেছেন তাকে ছেড়ে অবৈধ জায়গায় ছুটছেন, এর জন্য কিয়ামতের দিন হিসাব দিতে হবে । এতোটুকু কথা মনে রাখতে পারলে শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে যাবেন । ইনশাআল্লাহ

৪. স্ত্রীর মা-বাবাকে গালি দেওয়া

স্ত্রীর মা-বাবাকে গালি দিলে একজন স্ত্রী কখনোই তা সহ্য করতে পারে না । কারণ তার মা-বাবা বড় কষ্ট করে তাকে লালনপালন করেছেন এবং তাদের রক্ত তার শরীরে বইছে ফলে তার পিতা-মাতাকে গালি দিলে সে কখনোই সহ্য করতে পারেনা গভীরভাবে কষ্ট পায় ।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, সবচেয়ে বড় কবীরা গুণাহ হচ্ছে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তার মা-বাবাকে অভিশাপ করা (অর্থাৎ গালি দেওয়া) । বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) মানুষ তার মা-বাবাকে কীভাবে অভিশাপ করে ? তিনি বললেন, কোনো ব্যক্তি অপরের মা-বাবাকে গালি দেয়। ফলে সেও তার মা-বাবাকে গালি দেয়।’ (বুখারী, হাদীস/৫৯৭৩; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৯১৬)

তাই কেউ যদি নিয়মিত তার স্ত্রীর মা-বাবাকে গালি দেয় তাহলে স্ত্রীও একদিন পাল্টা গালি দিতে শিখবে । আর এমন যদি হয় তাহলে নিজের বাবাকে মাকে গালি দেওয়ার সমান হবে ।

তাই স্ত্রীর বাবা মাকে গালি দেওয়া মানে নিজের বাবা মাকে গালি দেওয়া হয়, পাশাপাশি স্ত্রীর মনে কষ্ট দেওয়া হয় । তাই এই গুনাহের কাজ প্রত্যেক স্বামীকে বর্জন করা উচিত ।

৫.মানসিক টর্চার/যন্ত্রণা

অনেক সময় বিয়ের পর স্ত্রীর ছোট ছোট ভুলের জন্য মারধর করে থাকে মানসিক টর্চার ও অত্যাচার করে থাকে । ছোটখাটো ভুলের জন্য অকারণে স্ত্রীকে মারধর করা বা শাস্তি দেওয়া জায়েজ নেই ।

স্ত্রী যদি ভুল করে থাকে তাহলে ভালবেসে তার ভুল শোধরানোই একজন উত্তম স্বামীর বৈশিষ্ট্য ।
একজন স্ত্রী কখনো চাই না যে তার স্বামী তাকে মানসিকভাবে অত্যাচার করুক ।

তাই প্রত্যেক স্বামীর দায়িত্ব হলো নিজেদের স্ত্রীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করা । যে স্ত্রী সবকিছু ছেড়ে চলে এসেছে শুধু স্বামীর ভরসায়, সারা জীবন একটু সুখের কাটানোর আশায়। এরপর স্বামী নিষ্ঠুর হলে স্ত্রী কোথায় যাবে । স্বামীকে সেই কথা চিন্তা করে তার ছোটখাটো ভুলগুলি মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে । স্ত্রীর সম্পূর্ণ হক আদায় করতে হবে।

Leave a Comment